ভিজিট করুন নতুন ও স্হায়ী ব্লগ www.alomoy.com, it.alomoy.com

ধর্ম মানব জীবনের কোন আলাদা বিভাগ নয় বরং সকল বিভাগের নিয়ন্ত্রক।

মানব জীবন অনেকগুলো বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন অথর্নীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে ধর্মকেও এমন একটি বিভাগ মনে করা হয়।সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায় সেই ধর্ম মানব জীবনে কি কাজে লাগে? আমি নামাজ পড়লাম, রোজা রাখলাম, নফল ইবাদাত করলাম অর্থাৎ ধর্মীয় কাজ করলাম। কিন্তু এটা করে আমি সময় নষ্ট (?) করলাম কেন?
আমি তো ঐ সময় বসে বসে বিজ্ঞান শিখতে পারতাম বা গল্প পড়তে পারতাম।
এভাবে চিন্তা করলে মানবজীবনে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই। আর সে কারণে ধর্ম নামে আলাদা তো দূরের কথা কোন বিভাগই থাকা উচিৎ নয়।

এজন্যই কিছু বস্তুবাদী ও কমিউনিস্ট ধর্মকে মানবজীবন থেকে ছেঁটে ফেলতে চাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় (?) কাজ করে সময় নষ্ট করার মানে কি।

কিন্তু ধর্মতো নিছক আচার-অনুষ্ঠানের নাম নয়। সঠিক করে বললে ধর্ম হচ্ছে জীবনব্যাবস্থা অর্থ্যাৎ দ্বীন।মানবজীবনে অনেকগুলো বিভাগ আছে সত্য। কিন্তু সেই বিভাগগুলোকে যখন ধর্মের আওতায় আনা হবে এবং ধর্মের (সঠিক করে বললে দ্বীন) মাপকাঠি দিয়ে বিচার করে পরিচালনা করা হবে তখনি এবং শুধুমাত্র তখনি সেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাঙ্খিত লক্ষ্যে অর্থ্যাৎ মানবজীবনকে শান্তি উপহার দেবার লক্ষ্যে পৌঁছুবে।

প্রশ্ন আসবে এসকল বিভাগকে (অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি) কেন কোন কিছুর অধীনে রাখতে হবে?
সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলুক। যেমন বিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি যার যার নিজের নিয়মমাফিক চলুকনা।


এ প্রস্তাবটা বাহ্যিকভাবে যৌক্তিক মনে হলেও অন্তঃসারশূণ্য।
কারণ এ বিভাগগুলো বাহ্যিকভাবে পরস্পর-সম্পর্কহীন মনে হলেও তারা এক অপরের সাথে গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কিত। তাই কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে সকল বিষয়কে মিলিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আপাতদৃষ্টিতা বিষয়গুলোকে পরস্পর সম্পর্কহীন মনে হলেও এসবগুলোর সমষ্টিই যেহেতু মানবজীবন তাই এদের মধ্যে অবশ্যই আন্ত:সম্পর্ক থাকতেই হবে।
যেমন- পুরো মানবদেহের অঙ্গগুলো আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্কহীন বলে মনে হলেও হাত,পা, অন্ত্র, কিডনি ইত্যাদি গভীরভাবে পরস্পর সম্পর্কিত।
এ সম্পর্কে ছোটবেলায় আব্বুর বলা একটি কৌতুক মনে পড়ল। একবার নাকি হাত,পা বিদ্রোহ করল যে আমরা এত কষ্ট করে উপার্জন করি- আর পেট ব্যাটা বসে বসে খায়। আমরা কাল থেকে কাজ করবনা। যা ভাবা তাই কাজ। তারা কাজ করলনা। কয়েকদিন পর নিজেরাই দেখল হায়রে কোথায় আগের সেই হৃষ্টপুষ্ট হাত-পা! তার বদলে এখন যে হাত, পায়ের কোষগুলি শুকিয়ে একবারে মৃতপ্রায়!! পরে বেচারারা আবার কাজ শুরু করল।

কিন্তু এমন কোন মানুষ নেই যার এই সকল বিভাগগুলোর সার্বিক জ্ঞান আছে যা দিয়ে সে আইন রচনা করে বিভাগগুলোকে পরিচালনা করবে। এমন জ্ঞান আছে শুধু আল্লাহর। তিনি মানুষের স্রষ্টা তাই তিনিই জানেন এ জটিল ব্যাবস্থার (মানবমেশিন) জন্যে কি কি দরকার।

যুক্তি আসতে পারে, মানুষের একার সার্বিক জ্ঞান নেই ঠিক। কিন্তু যখন প্রতিটি ক্ষেত্রের সবার বুদ্ধি সমন্বিত করা হবে তখন নিশ্চয়ই একটা স্থিতিশীল আইন প্রণয়ন করা যাবে।

এর উত্তর হচ্ছে প্রথমত মানুষকে তো জানতে হবে তার এ জটিল শারীরিক অবস্থাকে। কিন্তু আমরা এটার কতটুকইবা জানি আমাদের এই জটিল শরীর ও শারীরিক ব্যাস্থাকে। এর পর রইল সামাজিক, রাষ্ট্রীয় দিক সমূহ।

দ্বিতীয়ত, মানুষকে আইন প্রণয়ন করতে দিলে সে ন্যায় ও ভারসাম্যপূর্ণ আইন রচনা করতে পারবেনা। কারণ তার আইনে থাকবে হিংসাও বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। (জাতিসংঘের কথাই ধরুন)
। তার নিজস্ব আইনে থাকবে তার নিজ-স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ, আরো কত কি। আরেকটি
কৌতুক বলার লোভ সামলাতে পারছিনা। হয়তো জানেনই।

এক গ্রাম্য চেয়ারম্যান ঘোষণা করল, "আগামী মাস থেকে এ গাঁয়ে যৌতুক নিষিদ্ধ"
জিজ্ঞেস করা হলো, ":এ মাস থেকে নয় কেন?"
উত্তর আসল, "এ মাসে যে আমার ছেলের বিয়ে!!"
এ হল মানবরচিত আইনের নমুনা।


তাই মানবজীবনের আইন রচনার ভার পড়া উচিৎ এমন এক সত্তার কাছে যিনি মানবের স্রষ্টা, মানবের ভালোমন্দ কিসে তা জানেন, মানবের জীবনের যত জ্ঞান-তত্বাদি দরকার তার পুরো ভান্ডার তার কাছে রয়েছে। যিনি হিংসুক নন, স্বার্থপর নন। যার সাথে কারো কোন ব্যক্তি-বিদ্বেষ নেই। তিনি হলেন আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন, রহমানুর রাহীম।

এ কারণেই নামাজ, রোজা নিছক কোন আচার-সর্বস্ব নিষ্প্রাণ অনুষ্টানাদি নয় বরং মানবজীবন গঠনের প্রশিক্ষণ, মূলমন্ত্র। আমরা আল্লাহকে না পাছে ভুলে যাই তা্ই দিনে পাঁচবার তাঁকে স্মরণ করি। আমাদের নামাজে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় মানবজীবন পরিচালনায় তাঁর আনুগত্যের গুরুত্ব, ভুল শোধরাবার গঠনমূলক কৌশল। স্মরণ করানো হয় তোমরা একই উৎস -আদম- হাওয়া থেকে সৃষ্ট। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় সকলেই সমান। কেউ অধিক মর্যাদাবান হতে পারে শুধ সৎকাজ ও আল্লাহভীতির দ্বারা, কালো-সাদা বা ধনী গরীব হবার দ্বারা নয়।

আমরা আফ্রিকার জঘণ্য বর্ণবাদের কথা জানি। ইসলাম এর মূলে কুঠারাঘাত করে। মানুষে মানুষে সকল ভেদাভেদ দূরে ঠেলে দেয়। একইভাবে যাকাত, হজ্ব, রোজা কোনটাই কোন নিষ্প্রাণ আচার-সর্বস্ব অনুষ্ঠান নয়। এগুলোর প্রত্যেকটি মানবজীবনকে সুন্দর করে গড়ার প্রশিক্ষণ।

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন