ভিজিট করুন নতুন ও স্হায়ী ব্লগ www.alomoy.com, it.alomoy.com

নারীদের ঘরের বাইরে চাকুরী: মুদ্রার অপর পিঠ

 প্রথম প্রকাশঃ এসবি ব্লগ
স্বীকার্য: প্রথমেই বলতে হয় আমি নারী বিদ্বেষীও নই নারীদের চাকুরী করার বিপক্ষেও নই। কিন্তু বর্তমান সমাজকাঠামোয় নারীদের চাকুরীর সঠিক রূপ আমার মতে একটু বিশ্লেষণের দাবী রাখে। কেউ যুক্তির মাধ্যমে আমার কথার অসারতা দেখিয়ে দিতে দিতে পারলে আমার আপত্তির কোন কারণ থাকবেনা।

নারী পুরুষ স্বভাবগতভাবে ভিন্ন বৈশিষ্টের অধিকারী:
নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য স্বভাবজাতভাবেই ভিন্ন। তারা এক অপরের পরিপূরক কিন্তু 'অভিন্ন' বা 'একই' নয়। যেমন ধরা যাক এক লোক বাড়ীভাড়া বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা ও চাকুরী থেকে ৫০ হাজার-মোট ১ লাখ টাকা আয় করেন। অপর এক লোকও সমপরিমাণ আয় করেন-তবে ইনি বাড়ীভাড়া থেকে ৬০ হাজার ও চাকুরী থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। এক্ষেত্রে উভয়েই 'সমান' কিন্তু 'একই' বা 'অভিন্ন' নন।
একইভাবে নারী ও পুরুষ এক অপরের পরিপূরক কিন্তু উভয়ের কাছ থেকে একই ধরণের কাজ আশা করা স্বভাববিরুদ্ধ। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৈশিষ্টগত কারণে দক্ষ হওয়ায় অর্থনৈতিক কাজে পুরুষরাই বেশি যোগ্য। [ব্যাতিক্রমকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া অনুচিত]
এর অর্থ অবশ্য এ নয় যে পুরুষরা বেশী মর্যাদার অধিকারী বা স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ আছে বরং স্রেফ দায়িত্বশীল।

বাংলাদেশে নারীরদের চাকুরীর প্রভাব:

১. পুরুষের চাকুরী হ্রাস:

বর্তমানে স্কুল-কলেজ সহ চাকুরীর অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নারীদের যোগ্যতাও কম লাগে। যেমন প্রাইমারী স্কুলে চাকরী পেতে নারীদের জন্য এস.এস.সি পাশই যথেষ্ট যেখানে পুরুষের জন্য নূন্যতম বি.এ পাশ করতে হয়! ফলে নারীরা সহজে ও অধিকসংখ্যক চাকরী পচ্ছেন।
পরিণতি কী দাড়াচ্ছে?
দেখা যাচ্ছে কোন পরিবারে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরী করছেন, অন্যদিকে বেশিরভাগ পরিবারেই নারী কোন কারণে এমনিতেই চাকরী করছেননা আর তার স্বামীও (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই) অপেক্ষাকৃত অযোগ্য ও কমশিক্ষিত (যেহেতু যোগ্যতা কম লাগে) নারীর কাছে প্রতিযোগিতায় হেরে বেকার!

২. পুরুষের চাকরীর প্রতি অনীহা সৃষ্টি:

আমাদের গ্রামে বাহার নামে (আসল নাম নয়) এক লোক আছেন। তার এইচ.এস. সি পাশ করা স্ত্রী প্রাইমারী স্কুলে চাকরী করছেন। আর তিনি!- বাপ আর বউয়ের হোটেলে খেয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে দিব্বি দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। উল্লেখ্য তার স্ত্রী চাকরী না করলে পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়েই তাকে কাজ খুঁজতে হত। তার মাধ্যমে একটি বেকারত্ব ঘুচত, অন্যদিকে তার স্ত্রীর স্হলে চাকরী পেয়ে আরেকজন পুরষেরও বেকারত্ব ঘুচত।

৩. শিশুদের মানসিক পরিচর্যা ও নৈতিকতা গঠন:

নেপোলিয়ন বলেছিলেন 'শিক্ষিত মা দিলে শিক্ষিত জাতি' উপহার দেবার কথা। কীভাবে দেবেন?
মা হচ্ছেন শিশুর প্রথম শিক্ষক। মায়েরাই শিশুর শৈশবকালীন প্রাথমিক অবস্থা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। তাই মায়েদের শিশুদেরকে সময় দেয়া অপরিহার্য। বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন ছুটি শিশুর জন্ম থেকে ৬ মাস। কিন্তু এত অল্প সময়ে মায়ের পক্ষে শিশুকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া সম্ভবপর নয়। ফলে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই হয়ে পড়ে লাগামহীন বন্ধু ও আড্ডাপ্রবণ (কেউ তাদের খোঁজখবর নেই বলে যাচ্ছেতাই কাজ করবার সুযোগ হয়) যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ পথে যাবার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা হয়ে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও নৈতিকতা-বিবর্জিত। এসবগুলো কারণে পরবর্তীতে তারা মাদকাসক্তি, মেয়েদের উত্যক্তকরণ ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রাম বাংলায় একটি কথা আছে- যার আক্কেল নয় বছরে না হয় তার নব্বই বছরেও আক্কেল হবেনা। কথাটা চরম বাস্তব। শিশুকাল থেকেই শিশুকে সময় দিয়ে অভ্যাস গড়ে দিতে পারলে ভবিষ্যতে বিপথে যাবার সম্ভাবনা কমে যায়।

আর মায়েরাই শিশুর শৈশবকালীন অবস্থা ভাল বোঝেন ও তাঁদের সাথে শিশুদের মা সুলভ আকর্ষণ (বৈজ্ঞানিক কারণে বুকের দুধ পান করানোর ফলে সৃষ্ট সহজাত সম্মান, ভক্তি, শ্রদ্ধা) থাকার কারণে ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে মানুষরূপে গড়ে তুলতে মায়েরাই বেশি দক্ষ।
স্বভাবজাত কারণে পুরুষ এ পর্যায়ে অদক্ষ। উন্নতি করতে হলে স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই করতে হবে, লঙ্গন করে নয় কারণ সেভাবে যে উন্নতি পাওয়া যাবে তা স্হায়ী ও ভারসাম্যপূর্ণ হবেনা।

৪. শিশুপ্রতিপালনে কাজের বুয়া বা কাজের মেয়ে:

মায়েদের অনুপস্হিতিতে অনেক সময় শিশুদের লালনপালনের ভার পড়ে কাজের মহিলা বা মেয়েদের উপর। অথবা শিশুকে কোন শিশুপালন কেন্দ্রে দেওয়া হয়। এটা হয় অর্থের বিনিময়ে। আর যেখানেই অর্থের বিনিময়ে কাজ হয় সেখানে শতভাগ আন্তরিকতা ও উজাড় করে দেবার মানসিকতা থাকেনা। ফলে শিশুদের পরিচর্যা হয় দায়সারা গোছের। এ ছাড়াও কাজের মহিলারা অশিক্ষিত ও বেশিরভাগ সময় অসংস্কৃত হওয়ায় তাদের সংস্পর্শে শিশুরা বেড়ে ওঠে অসংস্কৃত পরিবেশে।

৫. মাতুত্বকালীন ছুটজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও নারীদের শারীরিক দিক:

নারীরা ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুট পান বলে এ সময় তারা কাজ না করেই বেতন পান। এটা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও ঝুঁকির্পর্ণ। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয় যেটা পুরুষ সদস্যের বেলায় ঘটতোনা। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম- গ্রামের এক স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষিকা সক্রিয় আছেন। কারণ ৪ শিক্ষকের একজন পুরুষ অসুস্হতা বা অন্য কি কারণে অনেকদিন ধরে নেই। বাকী দুজন মহিলার উভয়েই মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। কোন কারণে একমাত্র শিক্ষিকা না এলেই স্কুল অচল!
শারীরিক কারণে নারীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। বৈজ্ঞানিক কারণে এ সময় তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা সমস্যায় ভোগেন যা বেশিরভাগক্ষেত্রেই নেতিবাচক ফলদায়ক হতে পারে।

৬. কর্মস্হলে হয়রানির শিকার:


কর্মস্হলে নারীদের হয়রানির ঘটনা বর্তমানে একবারেই সাধারণ। ডেইলি স্টার পত্রিকার শুক্রবারের ম্যাগাজিন ‘দি স্টার’ এর 'রাইট টু মিতা' ( এখানে পাঠকরা 'মিতা'র কাছে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান চায়) অংশে দেখা যায় অনেকেই 'মিতা'র কাছে কর্মস্হলে হয়রানীজনিত সমস্যাই বেশি উপস্হাপন করে। কারো পিছনে তাদের বস বা সহকর্মীরা লেগে থাকেন অবৈধ প্রেম বা সম্পর্কের প্রস্তাব নিয়ে। মানবীয় দূর্বলতা, চাকরী হারানোর ভয়, পরকালে জবাবদিহীতার ভয় না থাকা ইত্যাদি কারণে বেশিরভাগ নারীদের পক্ষে বেশিদিন এসব প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে যাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনা।
এটা পরিবার ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন অফিসিয়াল ট্যুর ও লাঞ্চের সময় নারী-পুরুষের অবাধ মিথস্ক্রিয়ার (ইন্টারেকশান) সুযোগ হয় যার পরিণতি হয় নেতিবাচক ও সুদুরপ্রসারী- পরিবারভাঙ্গন, দাম্পত্যকলহ ইত্যাদি।

৭.গৃহস্হালী কাজ:

এছাড়াও কর্মজীবি নারীরা কাজ থেকে ফিরে আবার গৃহস্থালী কাজও করেন। ফলে তারা দোমুখী কাজের চাপে পড়ে যান। কোন কোন পরিবারে কাজের মহিলা বা মেয়ে থাকলেও (এতে করে তো তারা আবার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে) কিছু কিছু কাজ তিনি একান্ত নিজেই করতে চান। তাছাড়া কতজনেরই আর এ সামর্থ্য আছে? দেখা যায় যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মজীবি সেখানে স্বামী কাজ থেকে ফিরেই হয়তো ঘুম দেন নয়তো টিভি দেখেন অথবা ব্লগ বা নেটে অন্য কোথাও আড্ডা দেন। অন্যদিকে স্ত্রী জড়িয়ে পড়েন গৃহস্থালী বিভিন্ন কাজকর্মে।
এসব কারণে দাম্পত্য-জীবনে বিতৃষ্ণা ও হিংসার ভাব চলে আসে, পরিবার ব্যাবস্থার প্রতি তৈরি হয় অনীহা।
মানব সভ্যতার অন্যতম একক 'পরিবার' স্হিতিশীল না হলে সমাজ, পরিণামে রাষ্ট্র কীভাবে স্হিতিশীল ও শান্তিময় হবে? বস্তুত, পরিবার ব্যাবস্থার সুষ্ঠু বিকাশ ছাড়া শান্তি ও ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্ব গঠনের চিন্তাই অলীক। প্রতিটি সচেতন ও শান্তিকামী মানুষই এটা স্বীকার করেন।

সম্ভাব্য সমাধান: এ আলোচনার মাধ্যমে আমি বলতে চাচ্ছিনা নারীদের কর্মজীবিই হওয়া অনুচিত।
বরং তাদের পরিবেশ, পরিস্হিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে সঙ্গতিময় ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উপরোক্ত ৬ নং সমস্যার সমাধান হিজাব পালন ও বিপরীত-লিঙ্গের অবাধ মিথস্ক্রিয়া রোধের মাধ্যমে সহজেই সমাধান হতে পারে।

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন