ভিজিট করুন নতুন ও স্হায়ী ব্লগ www.alomoy.com, it.alomoy.com

ইসলামী জীবনব্যাবস্থাই সত্য ও সঠিক-অখণ্ডনীয় যুক্তি


১. জীবনব্যাবস্থার ভাষার তাৎপর্যঃ
ইসলামী আদর্শের ভিত্তি কুরআনের ভাষা আরবী। এটি একটি জীবন্ত ভাষা। সেই ১৪০০ বছর আগে যেমন ছিলো এখনও প্রায় শতভাগ তেমনই আছে। আমাদের জন্য কয়েকশো বছর আগেরও বাংলা বা ইংরেজি ভাষা বুঝাতো দূরের কথা পড়তেই কষ্ট হবে। ফলে এ আদর্শকে বুঝা ও এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠা অনেকটাই সুবিধাজনক।
এ ভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো অল্প কথায় অধিক ভাব প্রকাশের গুণ। ছোট্ট বাক্য বা শব্দেই অসংখ্য অন্তর্নিহিত ভাব ফুটয়ে তোলা সম্ভব। যেমন وَالْأَرْ‌ضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا (সুরা নাযিআত, ৭৯:৩০)। এখানে দাহাহ্বা মানে প্রসারিত করা। এরই আরেকটি অর্থ  উটপাখির ডিম। তাহলে অর্থ দাঁড়ায় , “অতঃপর তিনি পৃথিবীকে করলেন উটপাখির ডিমের মত”। এখন আমরা জানি পৃথিবীর আকার সম্পূর্ণ গোলক বা কমলালেবুর মত নয় , আসলে এটি মেরু অঞ্চলদ্বয়ে চাপা হওয়ায় আকৃতি দাঁড়ায় উটপাখির ডিমের মতই। 
এছাড়াও এ ভাষা সহজেই মুখস্ত করা যায়। 
২. রাসুলুল্লাহর (সা.) এর আবির্ভাবের সময় এর গুরুত্ব:  যেকোন মতবাদ বা জীবনব্যাস্থাকে টিকে থাকতে ও প্রতিষ্ঠিত হতে হলে এর মূল উৎসটি বিদ্যমান থাকতে হবে অবিকৃতভাবে। ইসলামী জীবনব্যাবস্থার মূল ভিত্তি কুরআন। আর এটাই নাজিলের পর থেকে এ জীবব্যাবস্থার জন্য চিরস্থায়ী উৎস। এটা এমনই এক যুগে নাজিল করা হলো যখন এটাকে আর বিকৃত বা নষ্ট করা প্রযুক্তিগত কারণে বিকৃতমনা মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেল। (যা আল্লাহরই ঘোষণা-সুরা হিজর, ১৫:৯)
যুগটা ছিল এমনই যখন ইতিহাস আর কয়েকটা বাঁক ঘুরতেই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে পদার্পণ করতে যাচ্ছিল । এ সময়ের ফলে সুবিধা হলো-
-একে নষ্ট বা বিকৃত করবার কোন সুযোগ থাকলনা
-এটায় বিজ্ঞানচর্চার বিশদ রসদ রয়েছে যা সেসময়ের পরবর্তী যুগের সভ্যতার নির্ধারক হবে
-এটায় আগতযগের বিজ্ঞানভিত্তিক মানুষকে ইসলামের দিকে আনার জন্যে সুন্দর বৈজ্ঞানিক যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে।
৩. যে জাতির কাছে পাঠানো হলো তার তাৎপর্য: কোন বিশ্বব্যাপী জীবনব্যাবস্থা বা মতবাদ গোড়াতেই সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়না। প্রথমে একে এর উৎপত্তিস্থলে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে হয়। তৎকালীন বিশ্বে ইসলামের পক্ষে এ কাজের জন্যে আরবদের সমকক্ষ কোন জাতি ছিলনা। ইসলাম-হীন সমাজে যদিও তারা ছিল হিংস্র কিন্তু তারা ছিল প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় দৃঢ় ও অকুতোভয়, অসীম সাহসী। গোত্রীয় কলহ চরমে পৌঁছানোর পরেও পাশ্ববর্তী দুই পরাশক্তি রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের কায়সার ও কিসরা তাদেরকে বশে আনতে পারেনি। গরম আবহাওয়া, মরুঝড়ের ঝাপটা, রাতদিনের কষ্টকর সফর, ক্ষুধা ও পিপাসার অভিজ্ঞতা, প্রতিদিনের হত্যা ও লুটতরাজ ইত্যাদি তাদেরকে দুঃসাহসী ও দুর্ধর্ষ করে তুলেছিল যাকে নৈতিকতার পোষাক পরিয়ে দিলে তা একটি আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে সমকক্ষহীন হতে পারত।

এছাড়া আগের পয়েন্টে যেমনটা বলেছি আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হলে এর উৎসসমূহ বিদ্যমান থাকতে হবে। লক্ষ্যণীয়- কুরআন নাজিল হলো এমন জাতির কাছে প্রাথমিক যুগে কুরআন সংরক্ষণে সত্যিই আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারত। কারণ হলো তাদের স্মরণশক্তি ছিলো কল্পনাতীত। নিজেদের বংশ পরম্পরা তো বটেই, এমনকি তারা তাদের ঘোড়ার বংশ পরম্পরাও মুখস্থ রাখতো।


৪. রাসুল সা. কে প্রেরিত এলাকার গুরুত্বঃ তৎকালীন সময়ে একটি মতাদর্শকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার জন্যে সবচেয়ে অনুকূল এলাকা ছিল ঐ আরব উপদ্বীপ। এটা ছিল তখনকার সভ্য দুনিয়ার কেন্দ্রস্থলে। প্রাচ্য, পাশ্চাত্য ও উত্তর দিক থেকে আগত সকল বাণিজ্যিক পথগুলো আরব ভূখন্ডের সাথে এসে মিলিত হয়েছিল। ভারত, চীন, ইরাক, পারস্য (ইরান), মিশর, রোম ও ইথওপিয়া সকল অঞ্চলের ব্যাবসায়িক মিলনকেন্দ্র ছিল এটি।
আবার পৃথিবীর সকল মুসলমানের কাবা যে মক্কায় সেটাও পৃথিবীর ভূভাগের কেন্দ্রে- দুইমেরুর মাঝখানে যা নামাজের কেবলা হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে একই বৃত্তে সকল মুসলমানকে আবদ্ধ করে যা ঐক্যেরও প্রতীক।

৫. অত্যাচার ও নির্যাতনের মুখে আদর্শবাদীদের দৃঢ়তাঃ
যেকোন মতাদর্শই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে গেলে বিরুদ্ধবাদীদের নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। তবে ইসলাম এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এর অনুসারীরা যেমন বিরল নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে তেমনি নির্যাতনের মুখে অটল থাকারও বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিসের টানে হযরত খুবাইব রা. হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে যেতে পারেন, কিসের টানে হযরত মুসয়াব রা. বাবা-মায়ের আদরের বন্ধন ও বিলাসিতা কুরবানী করতে পারেন? এযে সত্যের মোহ!!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাফাহ আস সাহমী রা. এর ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য। হিজরী ১৯ সনে রোমানদের সাথে যুদ্ধে তিনি বন্দী হলে রোম সম্রাট কাইসার তাকে দেখতে চান। তাঁকে অর্ধেক সাম্রাজ্য ও কন্যা সমর্পণের লোভ দেখিয়ে খৃষ্টধর্ম গ্রহণের লোভ দেখানো হয়। ব্যার্থ হয়ে শূলীকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রাখা হলো, তিনি অনড়। এবার তাঁকে দু’পায়ে ঝুলিয়ে বেঁধে পুনরায় একই দাবী রাখা হলো। তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করলেন। এবার বিশাল এক কড়াইয়ে তেল ঢেলে আগুণে ফুটিয়ে টগবগে উত্তপ্ত করে অন্য দু’জন মুসলিম বন্দীকে তাতে ফেলে দেওয়া হলো। সাথে সাথে তাদের হাড় থেকে গোশত পৃথক হয়ে গেল। তাকেও এখানে ফেলে দেবার হুমকি দিয়ে পুনারায় একই দাবী জানালে তিনি আরো জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। (অবশ্য পরে অন্য ৮০ জন মুসলিমকেও মুক্তি দেওয়া হবে- এই শর্তে সম্রাটের মাথায় চুম্বন করে মুক্তি পান)
হযরত খাব্বাবকে পাথর আগুণে গরম করে তার উপর শুইয়ে দেওয়া হতো, তাঁর কাঁর্ধের চর্বি গলে যেতো। গলিত চর্বিতেই আগুণ নিভতো!!
কেন এই দৃঢ়তা? এযে সত্যেপলদ্ধির ফসল।

৬. হাদিসের পূর্ণাঙ্গতাঃ
এক হাদিসে রাসুল সা. দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেন সে ৪০ দিন টিকে থাকবে যার একদিন এক মাসের সমান, একদিন এক সপ্তাহের সমান এবং বাকী ‍দিনগুলো স্বাভাবিক হবে। তখন সাহাবা (রা. আনহুম) রা বললেন  “দীর্ঘ দিনটিতে কি একদিনের নামাজ পড়লেই যথেষ্ট হবে?” তিনি জবাব দিলেন, “না , হিসেব করে পড়ে নিতে হবে”
যদিও সাহাবারা (রা. আনহুম) জানতেন দাজ্জাল তাঁদের সময় নয় বরং হযরত ঈসার (আ.) পুনারার্বিভাবের প্রাক্কালে আসবে তবুও পরবর্তী সেই যুগের মুসলমানদের জন্য প্রয়োজনীয় বিধানটি সাহাবাদের দ্বারা ও জিজ্ঞেস করা ও রাসুলের (সা.) মুখ দিয়ে বের করা আল্লাহরেই কৌশল। এমন দূরদর্শী বিভিন্ন বিধানাবলীতে হাদিসের গ্রন্থাবলী ভরপুর।
কোন মানবীয় মতাদর্শের পক্ষে এমন সর্বকালের যুগোপযোগী বিধান গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
 তথ্যসূত্র:
মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদ সা.- নঈম সিদ্দিকী
আসহাবে রাসুলে জীবনকথা-২/৮০,৮৫
রিয়াদুস সালেহীন -৪/২০০

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন