আল কুরআন। সুরা আম্বিয়া (২১:৩০)
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ:
”অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না “
”অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না “
বস্তুত এ আয়াতে অতিসংক্ষেপে মহাবিশ্ব সৃষ্টির বর্ণনা দেওয়া আছে। নেটে
ইসলামের অন্যতম কুৎসাকারী আলী সিনার (পাতানো
নাম) মতে এখানে বিগব্যাংগ এর কথা খুঁজে পাওয়া নাকি হাস্যকর। তার মতে পৃথিবী সমগ্র মহাবিশ্বের
একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ। বলা হলো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একসাথে মিশে ছিল পরে বিচ্ছিন্ন
করা হলো- এ তুলনা কীভাবে হতে পারে? পুরো আকাশমন্ডলীর সাথে পৃথিবীর তুলনা কি করে হয়?
যেখানে এক অংশ সুবিশাল এবং অপর অংশ সে তুলনায় অবিবেচ্য।
খন্ডন:
১.কল্পনা করা যাক, এমন একটা ’বিশাল’ দেশ (ধরা যাক ’ক’) আছে যেখানে সর্বত্র নৈরাজ্য, হানাহানি, গৃহযুদ্ধ চলছে। পরে এই দেশের
একটি ক্ষুদ্র অংশ (’খ’) নিজেকে স্বাধীন করে ঐ বিশাল অংশ থেকে আলাদা হয়ে গেল। পরবর্তীতে এটা
অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হল। কিন্তু বিশাল দেশটির অবশিষ্টাংশ
এখনো নৈরাজ্যে ভরপুর। কোন শান্তিকামী মানুষ সেখানে বাস করতে চাবেনা।
এ প্রেক্ষাপট থেকে কি বলা যাবেনা যে ’ক’ ও ’খ’ প্রথমে যুক্ত ছিল পরে বিভক্ত হয়ে গেল?
বলা যাবে কারণ ক আয়তনে বড় ঠিকই কিন্তু গুরুত্বে ও তাৎপর্যে বড় হচ্ছে খ। ফলে খ ই বেশি নজরকাড়া ও বিবেচনাপূর্ণ।
এ প্রেক্ষাপট থেকে কি বলা যাবেনা যে ’ক’ ও ’খ’ প্রথমে যুক্ত ছিল পরে বিভক্ত হয়ে গেল?
বলা যাবে কারণ ক আয়তনে বড় ঠিকই কিন্তু গুরুত্বে ও তাৎপর্যে বড় হচ্ছে খ। ফলে খ ই বেশি নজরকাড়া ও বিবেচনাপূর্ণ।
এখন পর্যন্ত জানা তথ্য মতে পৃথিবী মহাবিশ্বের একমাত্র বসবাসোপযোগী গ্রহ। সমগ্র মহাবিশ্বের তুলনায় আয়তনে এটা তুচ্ছ বটে তবে সুশৃংখ্যলতা, বসবাসোপযোগীতা ইত্যাদি দিক দিয়ে এটা সমগ্র মহাবিশ্বের চেয়েও বেশি তাৎপর্যের
দাবীদার।
পৃথিবী এমনই এক ভারসাম্যপূর্ণ স্থানে আছে
যদি বুধ বা শুক্রের মত সূর্য্য থেকে আরেকটু কাছে থাকত তবে অত্যাধিক গরমের কারণে আর
কিছুটা দূরে হলে মঙ্গলের (ইত্যাদি) মত শীতল হবার কারণে বসবাসোনপযোগী হয়ে পড়ত।
২. মানুষের সকল চিন্তাচেতনার (হোক তা মহাকাশবিজ্ঞান
বিষয়ক- সেক্ষেত্রেও নভোচারীরা পৃথিবীকেই তাদের বাড়ী বলে অনুভব করেন।) কেন্দ্র এই পৃথিবী।
মানুষের নিত্ত-নৈমিত্তিক আচার-আচরণ (dealings) এক কেন্দ্র করে।
তাই মহাবিশ্ব আলাদা হয়ে কি তৈরি হল তা
সঠিকরূপে বর্ণনা করার ও মানুষের জন্য বোধ্যগম্য করে ( যাতে সহজেই তুলনাটা বোঝা যায়)
উপস্হাপনের এটাই সবোৎকৃষ্ট উপায়।
৩. পৃথিবীকে উল্লেখের আরেকটা কারণ
হতে পারে আমাদের সামনে পৃথিবীর আদি অবস্থা তুলে ধরা। অর্থ্যাৎ এটা কি আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন
ছিল না এটা অন্য সকল মহাজাগতিক বস্তুর সাথে যুক্ত অবস্থায় ছিল। (পৃথিবী কি দিয়ে তৈরি
বা আদি অবস্থায় কি কি পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় সেটা এ আয়াতের আলোচ্য বিষয় নয়। সে আলোচনাও
যথাস্হানে আছে-৪১:১১)
কুরআনে বৈজ্ঞানিক নিদর্শন উল্লেখের উদ্দেশ্য:
মনে রাখতে আল কুরআন মূলত ‘বিজ্ঞানের’ বই নয়। এটা হলো ‘সব জ্ঞানের’ বই। এতে আছে আয়াত বা নিদর্শন। এতে মৌলিক পথপ্রদর্শনের পাশাপাশি মানবজীবনের
প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞানের কথা উল্লেখের মূল উদ্দেশ্য হলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের গবেষকদের
জানিয়ে দেওয়া যে তুমি যে সত্য এখন জানলে সেটা আমি অনেক আগেই কিতাবে লিখে রেখেছি
( লাওহে মাহফুজে- যেখান থেকে কুরআনকে নাযিল করা হয়)। এবং এভাবে তাকে আল্লাহর অস্তিত্ব,
পরকাল ইত্যাদির ব্যাপারে নিশ্চিত বুঝিয়ে দেওয়া যাতে করে সে আত্মসমর্পণ করে (অর্থ্যাৎ
মুসলিম হয়ে যায়) ও পরকালে জবাবদিহীতার কথা মনে রেখে অপরাধের পথে পা না বাড়ায়।
বিজ্ঞান মানবজীবনের একমাত্র বিষয়বস্তু,
মাপকাঠি বা সিদ্ধান্ত-নির্ণায়ক নয় :
অনেকে মনে করেন বিজ্ঞানই মানব জীবনের একমাত্র
আলোচ্যবস্তু ও মাপকাঠি বা সিদ্ধান্ত-নির্ণায়ক। তাই সবকিছুকে বিজ্ঞানের পাল্লা দিয়ে
মেপে দেখতে হবে। ( যেমন করে অনেকে আবার অর্থনীতিকে একমাত্র বিষয়বস্তু বলে ধরে নেয়-
কমিউনিস্টরা)। সত্যি কথা হলো মানবজীবনের আলোচ্যবিষয় সমূহের মধ্যে (যেমন সমাজনীতি, অর্থনীতি,
রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি) একটা হচ্ছে('one of the' not 'the only') বিজ্ঞান। তাই কোন সিদ্ধান্ত
নিতে হলে সকল বিষয়কে মিলিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আপাতদৃষ্টিতা বিষয়গুলোকে
পরস্পর সম্পর্কহীন মনে হলেও এসবগুলোর সমষ্টিই যেহেতু মানবজীবন তাই এদের মধ্যে অবশ্যই
আন্ত:সম্পর্ক থাকতেই হবে।
যেমন- পুরো মানবদেহের অঙ্গগুলো আপাতদৃষ্টিতে
সম্পর্কহীন বলে মনে হলেও হাত,পা, অন্ত্র, কিডনি ইত্যাদি গভীরভাবে পরস্পর সম্পর্কিত।
এ সম্পর্কে ছোটবেলায় আব্বুর বলা একটি কৌতুক
মনে পড়ল। একবার নাকি হাত,পা বিদ্রোহ করল যে আমরা এত কষ্ট করে উপার্জন করি- আর পেট ব্যাটা
বসে বসে খায়। আমরা কাল থেকে কাজ করবনা। যা ভাবা তাই কাজ। তারা কাজ করলনা। কয়েকদিন পর
নিজেরাই দেখল হায়রে কোথায় আগের সেই হৃষ্টপুষ্ট হাত-পা! তার বদলে এখন যে হাত,
পায়ের কোষগুলি শুকিয়ে একবারে মৃতপ্রায়!! পরে বেচারারা আবার কাজ শুরু করল।
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন